সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ময়মনসিংহে হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রা.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠানে হামলার পর মাজারেও হামলা, ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নগরীর থানার ঘাট এলাকায় অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত ৩টার দিকে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পীর বাবা খলিলুর রহমান চিশতী নিজামী বলেন, বুধবার হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রা.)-এর ১৭৯তম ওরস উপলক্ষে মাগরীবের পর মিলাদ করা হয়। মিলাদ শেষে ঠিক থানা গেটের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে সামা গানের আয়োজন করা হয়। সেখানে অনেক ভক্ত আশেকান জড়ো হয়। রাত ১১টার দিকে ওসি সাহেব সেখানে গিয়ে তাড়াহুড়া করে গান-বাজনা বন্ধ করতে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশো মাদরাসার ছাত্র এসে সব ভেঙে চুরমার করে দেয়। পরে রাত ৩টার দিকে এসে ছাত্ররা আবার মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আমরা খুব সুখে ছিলাম, দেড়শ’ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা এখানে অন্যায় কিছু করিনি। তারা এসব না ভেঙে বললেই পারতো সবকিছু বন্ধ করে দিতাম। এখন বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো করণীয় নেই। সঠিক বিচার হোক এটাই আমাদের চাওয়া।
আলম চিশতী বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে আমরা সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান করে আসছি। ওসি সাহেব যখন বললেন অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য, তখনই আমরা বন্ধ করে দেই। তারপরে কেন হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করা হলো। থানার সামনে আমাদের ওপর এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি। আল্লাহর ওলী আওলিয়ারা মানুষকে দ্বীন ও ধর্মের দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা তো কোনো ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড করি নাই।
শিল্পী মিজান বাউলা বলেন, ৪৫ বছর ধরে হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রা.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান হয়ে আসছে, কোনদিন এমন হয়নি। আমি যখন ইসলামিক গান পরিবেশন করছি তখন বড় মসজিদ মাদরাসার একদল হুজুর এসে হামলা ভাঙচুর শুরু করে। আমাদের ২-৩ জন আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় প্লাস্টিকের চেয়ার, সাউণ্ড সিস্টেম ও মঞ্চ। এ ঘটনায় আমরা আতংকিত হয়ে পড়েছি। থানার সামনে এমন ঘটনা কখনো কাম্য ছিল না। পরে মাজারেও হামলা হয়েছে, প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে সমাজে।
হযরত শাহ্সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রা.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান ও মাজারে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব অনেকেই। তারা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠান হামলা ভাঙচুরের ঘটনা নিজ মোবাইলে লাইভ করেন তরুণ কবি শামীম আশরাফ। তিনি বলেন, শিল্প সংস্কৃতির এই নগরীতে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যে যার মতাদর্শে চলবে সেটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। সেখানে হামলা ভাঙচুর কোনো সমাধান হতে পারে না।
ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, রাত থেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি সরব রয়েছি। হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করার পর মাজারে ভাঙচুর করাটা ঠিক হয়নি। এটি অমানবিক হয়েছে, আপনার মতের বিরুদ্ধে হলে প্রতিবাদ করতে পারেন, সেখানে সঙ্গবদ্ধ হয়ে হামলা চালাতে পারেন না। এতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়, তা কখনই আকাঙ্খিত না।
জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.) মোমেনশাহী বড় মসজিদ মাদরাসার প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পড়াশোনায় মনযোগী। তারা রাত ১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে, থানার গেটের সামনে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা ও মেয়েদের নাচ হচ্ছিল। তা কানে আসায় শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়, বন্ধ করে দিয়ে আসার সময় দুই একজন শিক্ষার্থীকে স্থানীয়রা মারধর করে হুমকি দিয়েছিল। পরে রাগে-ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা মাজারেও কিছুটা ভাঙচুর করেছে, তবে সে বিষয়টি সকালে অবগত হয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছি, এমন ঘটনায় যেন তারা আর জড়িত না হয়।
জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল করিম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। সেটি কোনোভাবেই কাম্য হয়নি। আমরা চাই না এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক ময়মনসিংহে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, আমি ঢাকায় রয়েছি, সামা কাওয়ালী অনুষ্ঠানে কে বা কারা হামলা চালিয়েছে শুনেছি। তবে এমনটি হয়ে থাকলে তা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। আশা রাখছি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষে প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.) মোমেনশাহী বড় মসজিদ মাদরাসার ছাত্ররা কাওয়ালী অনুষ্ঠান ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চেয়ার মঞ্চ ভাঙচুর করা হলেও কেউ আহত হয়নি। পরে আবার রাত ৩টার দিকে গিয়ে ছাত্ররা মাজারে ভাঙচুর করেছে। এখনও পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
আরএ