সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শ্যামনগরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন সপ্তাহ ধরে খাবার পানি নেই!
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, স্বজন, চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন জানান, হাসপাতাল থেকে পানির লাইনের চারটি মটর চুরি ও একটি বেসরকারি এনজিও থেকে দেওয়া একটি পানির প্ল্যান্ট নষ্ট হওয়াতে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
হাসপাতালে আসা রোগী সাইফুল ইসলাম বলেন, 'স্যালাইন গুলে খাওয়ার মতো পানি নেই হাসপাতালে। প্রতিটি কাজের জন্য বাইরে থেকে স্বজনদের পানি আনতে হচ্ছে।'
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশের দোকান থেকে কিনে, অনেক দূর থেকে হেঁটে ফিল্টার থেকে ও বাসাবাড়ি থেকে বোতলে বা বালতিতে করে পানি নিয়ে আসছেন রোগীর স্বজনরা। অনেকের দাবি, পানি না থাকায় রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’র বেশীরভাগই কথা বলেতে নারাজ তবে এর মধ্যে নাম না প্রকাশ শর্তে জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে এতদিন নির্ভর ছিল একটি বেসরকারি এনজিওর দেওয়া পানির প্লান্ট। তবে সেটি গত তিন সপ্তাহরও বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। রোগীরা প্রতিদিন পানি আনার কষ্টের কথা বলাবলি করে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ কেউ সে কথা গায়ে মাখে না।
উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের গুমানতলী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সকিনা খাতুন জানান, হাসপাতালে ভেতরে পাইপের পানি আছে, তবে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে একটি পানির ফিল্টার আছে তাও নষ্ট। তাই বাইরের দোকান থেকে পানি কিনে খেতে হয়। তাও আনার মানুষ নেই নিজেই গিয়ে পানি আনতে হয়।
নিউমোনিয়া আক্রান্ত মেয়েকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকা থেকে এসেছেন মর্জিনা খাতুন। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে দুইদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আগের রাতে খাবার পানির দরকার। কিন্ত, হাসপাতালের ভেতরে খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। পরে পাশে একজন কাছ থেকে পানি চেয়ে খেয়েছি। এরপর ভোরবেলা বাসায় ফোন দিলে বাসা থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসে।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে চারটি মটর অনেক আগেই চুরি গেলেও একেবারেই নড়চড় নেই কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালে রোগীরা খাবার পানির কষ্টে থাকলেও প্রশাসনের নড়াচড়ায় শামুকগতি বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একটি বেসরকারি এনজিও (উত্তরণ) এই পানির প্ল্যান্টটি স্থাপন করে। এটি নষ্ট হওয়াতে তারা আর মেরামত না করায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিকল্প পানির ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। তিনি আমাকে বলেছেন আমি ভিজিট করে দেখে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এখনো সেটা ভিজিট করেননি হয়তো দুই একদিনের মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এটা দেখা হবে। এছাড়াও হাসপাতালের মটরগুলো চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান তিনি।
শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ লিয়াকত আলী বাবু বলেন, হাসপাতালে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীর স্বজনরা দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে পান করছেন। এতে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে দ্রুত পানির ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. সঞ্জীব দাশ বলেন, বিষয়টি সমন্ধে অবগত নন তিনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
এফএইচ