সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ ৪৯ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মো. মামুন খান (২৭)। তিনি গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বুজরুক বোয়ালিয়া (হীরকপাড়া) গ্রামের মো. আব্দুল খালেকের ছেলে।
গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর রহমান সরকারকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ (৬৮), উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল (৪০), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান আতাউর রহমান বাবলু (৬২), সাবেক মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি (৪৫), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিয়া আসাদুজ্জামান হিরু (৪৫), উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ফরহাদ আকন্দ (৩৪), পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহিন আকন্দ (৫০), কামারদহ ইউপি চেয়ারম্যান তৌকির হাসান রচি (৩৭), ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়া (৪০), উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন (৩২), যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল ইসলাম (২৯), পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মাবিয়ার (৩৪), জাহিদ ইসলাম (৩৫), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল শেখ সুমন (৩৪), পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজা (৩৩), রাফসান জানি স্বর্নাভ (৩৩), উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মাজেদুল ইসলাম মাহিন (২২), ওয়ালিদ হাসান (২৭), উপজেলা শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ (৩২), সাগর ইসলাম (২৯), উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মুন্না খন্দকার (২৯), জীবন মন্ডল (৪২), তালুককানুপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিখন সরকার (২৮), নাকাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাওন আল শাদ (২৬), রাখালবুরুজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাইয়াজ আনাম শাফিন (২৬)।
আর আসামি হলেন- পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান (৩২), আতিকুর রহমান (৩৪), রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৬), সালমান (২৮), উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য রওশন আলী সনি (৩০), কমেট (৪৫), রুয়েল মন্ডল (৩৬), দিলীপ মন্ডল (৩৫), ছাত্রলীগ নেতা নুর আলম নুরু (২৮), পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুন্নু রহমান মুন্না (৩২), কাটাবাড়ি ইউপি ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মালেক দেওয়ান (২২), চাঁদ মিয়া (৪০), সামিউল আলিম (৩২), সাবেক মেয়রের পিএস পাপ্পু আকন্দ (২৭), রাকিবুল ইসলাম পলাশ (৩৫), রাখালবুরুজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেক মাহমুদ সুজন (২৫), সজল মহন্ত (৩০), রাহেল (২৩), রঞ্জু মিয়া (৪৫), খালেক (২৬), শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান আপেল (২৮), শাখাহার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রনি (২৪) ও ইউনুস আলী (৪২), গাজীয়ার রহমান (৩৫)। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ৪৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী মামুন খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সারাদেশের মতো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গত ১৭ জুলাই (বুধবার) বিকেল ৪টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাফিয়া আছাব বিপিএড কলেজ মাঠ থেকে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাকে ৭০০-৮০০ ছাত্র জনতা একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে শহরের ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে রাজমতি সুপার মার্কেটের সামনে এজাহার নামীয় আসামিগণসহ ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি দেশীয় পিস্তল, রাম-দা, চাইনিজ কুড়াল, চা-পাতি, বার্মিজ চাকু, হকিস্টিক, ইট ও পাথরের টুকরা ভর্তি চটের ব্যাগ নিয়ে অতর্কিতভাবে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।
আরও জানা গেছে, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিরা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশে মামুন খান, তাসিন, বাঁধন, ওয়ারিদ, শ্রাবণ, আকাশ, ওমর ফারুক, আবিদ হোসেন, ইজাজসহ ২০/২৫ জনের ওপর আক্রমণ করে। এছাড়া ৪০/৪২ জন আন্দোলনকারীকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়। আসামিদের আক্রমণে রাব্বী মিয়া আকাশ, জারিফ সরকার তাহসিন, শ্রাবণ সরকার, তানভীর সরকার বাঁধনসহ অসংখ্য আন্দোলনকারীরা আহত হয়। এসময় তারা আন্দোলনরত ছাত্র জনতার কাছে থাকা ৬টি স্মার্ট ফোন ও ৩টি বাটন ফোন ছিনিয়ে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মারপিট শেষে আন্দোলনকারীদের আবারও সুযোগমতো পেলে মারধরের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসামিগণ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কুঠিবাড়ি উপজেলা চত্বরে চলে যায়। পরে আহতরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ.ফ.ম. আছাদুজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষার্থী বাদী হয়ে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দিয়েছে। যাদের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে সরকার পতনের পর তাদের কেউই এখন এলাকায় নেই। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে।
আরএ