সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা অবৈধভাবে পালিয়ে ভারতে গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয়রা নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবুসহ চারজন ভারতে পালাতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হলে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও সামনে আসে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দেশ ত্যাগের পর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া এবং হালুয়াঘাট উপজেলা দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন।
গেল রোববার মধ্যরাতে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকারে ধোবাউড়া সীমান্তে যান একাত্তর টেলিভিশনের (সিইও) মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান ও প্রাইভেটকারের চালক সেলিম। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চুক্তিতে ভারতে যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের প্রতিপক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে বাঁধা সৃষ্টি করে। পরে হট্টগোল শুরু হলে স্থানীয়রা তাদের সীমান্তবর্তী দর্শা খোলা মাঠে আটক করে প্রাইভেটকার চালককে মারধর করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে ভোর রাতে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ময়মনসিংহ সদর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত, ময়মনসিংহ-১১ গফরগাঁও আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ এর অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে।
স্থানীয়রা বলছেন, হাসিনা সরকার পতনের পর হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার কড়ইগড়া, ভূঁইয়াপাড়া, তেলিখালী, ঘাটিয়াপাড়া এবং গাবড়াখালী দিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের দোসররা ভারতে পালাচ্ছে। তাদের পালানোর সহযোগিতা করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করে অপরাধীদের দেশে রেখেই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ধোবাউড়ার দক্ষিণ মাইজউড়া গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্তদের চলাফেরায় সন্দেহ হলে তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এর আগে ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য এদিক দিয়ে ভারতে গেছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের দোসররা সুবিধা নিচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে যে পথে অবৈধভাবে চিনি আসতো সে পথগুলো দিয়ে এখন মানুষ যাচ্ছে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার না করা হলে এসব বন্ধ হবে না।
মিনার হোসেন নামে একজন বলেন, সাংবাদিকরা যাদের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতে যাওয়ার জন্য আসছিল, তাদের প্রতিপক্ষ আরেকটি গ্রুপ বিষয়টি টের পেয়ে বাঁধা দিলে তাদের যাওয়া হয়নি। এসব ঘটনায় বিএনপি নেতারাই জড়িত।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.চান মিয়া বলেন, রোববার রাত দুইটার দিকে চারজনকে আটকের বিষয়টি স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ভোরে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তারা ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় সরকার পতনের পর ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য অবৈধভাবে ভারতে পালিয়েছে। কিন্তু আমরা এসব বিষয়ে নিশ্চিত না। এমনটি হওয়ার সুযোগ কম। এমন বিষয়ে পুলিশ জিরো টলারেন্স।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন বলেন, আটককৃতদের ঢাকা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে আটককৃতদের ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। তারাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।