সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বাড়ি লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার কমলনগরে। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বারবার বদল করতে হয়েছে স্থান। একেকবার একেক জায়গায় থাকতে হচ্ছে। তাও আবার পরের জায়গায়, দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়ে। জায়গার মালিক বললে ছেড়ে দিতে হয়। আবার অনাবদী বা ভিটা জমি খুঁজতে হয় থাকার জন্য। না পাওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে সেখানে দিন কাটাতে হয়। রাত এলে কোনো স্কুলের বারান্দায় অথবা কোনো বাজারের ছাউনির নীচে কাটাতে হয়। এইভাবে জীবন কেটে যাচ্ছে দুলাল মজুমদার ও স্বরস্বতী মজুমদার দম্পতির জীবন।
দুই ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। তার উপর এবারের ভয়াবহ বন্যায় না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতে হয়েছে। কোনো রকম সরকারি-বেসরকারি সাহায্য বা সহায়তা পাননি তারা।
এবারের বন্যায় তাদের দিন কেটেছে অনাহারে-অর্ধাহারে। কোনো রকমে শুকনো খাবার খেয়ে দুই সন্তাকে নিয়ে বেঁচে আছেন। কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে অনেকটা খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় দুলাল মজুমদার ভারী কাজ করতে পারেননা। ফলে আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ায় কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন। অর্থের অভাবে পারছেন না চিকিৎসা করাতে। দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ঘরে খাদ্য না থাকায় অন্যের কাছ থেকে কিছু চাল খুঁজে এনে সন্তানদের জন্য রান্না করেছেন দুলালের সহধর্মীনী স্বরস্বতী মজুমদার। টাকার অভাবে বাজার করতে না পারায় বাড়ির আশপাশ থেকে শাক তুলে এনে ঘরে থাকা পুরানো ডালের সঙ্গে রান্না করেছেন। ছেলেরা খেয়ে যা থাকবে সেটা তারা দুজনে ভাগ করে খাবেন।
সরেজমিনে সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের হাজীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করছেন তারা। ঘরের ভিতরে মাত্র একটি চৌকি পাতা। সেই চৌকিতে গাদাগাদি করে থাকেন চারজন। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেঁতে। বড় ছেলে সুজন মজুমদার (৯) পাশের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ায় স্কুলে গেছে। ছোট ছেলে অয়ন মজুমদার (৫) ক্ষুধায় হেঁটে হেঁটে মুড়ি খাচ্ছে। দুলাল মজুমদার ঘরের পাশে বয়ে যাওয়া খাল থেকে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। আশায় আছেন যদি কয়েটি মাছ পাওয়া যায় তাহলে সেগুলো দিয়ে সন্তানদের ভাত খাওয়াবেন।
স্বরস্বতী মজুমদার (৩৫) বলেন, আমরা পরদেশী। যাযাবর জীবন। নিজের ভিটামাটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানে এসেছি। এই জায়গায় আছি প্রায় পাঁচ বছর। তার আগে ছিলাম আরেকটি জায়গায়। সে জায়গার মালিক ছেড়ে দিতে বলায় এখানে উঠেছি। এ জায়গার মালিকের বাড়ি সন্দীপে। তিনি দয়া করে পাঁচ বছর থাকতে দিয়েছেন। এখন ছেড়ে দিতে বলায় অন্য কোথাও উঠব। যতদিন জায়গা না পাবো, ততদিন খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হবে। বন্যায় আমরা পানিবন্দী ছিলাম। ঘরের ভিতরে পানি ছিলো প্রায় হাঁটু পারিমাণ। চুলা জ্বলেনি কয়েকদিন। না খেয়ে থাকতে হয়েছে আমাদের। শুধু পানি খেয়ে দিন কাটিয়েছি। ছেলেরা ক্ষুধা সয়তে না পেরে পানি মাড়িয়ে বাজারে গিয়ে খুঁজে খুঁজে খেয়েছে।
দুলাল মজুমদার (৫০) বলেন, আমি অসুস্থ। ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। দিন মজুরী করে চলতাম। কিন্তু বন্যায় একেবারে কাজ বন্ধ। আয়ও নেই। না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা। বন্যার ভেতরে কেউ কোনো খবরও নেয়নি। কোনো সহায়তাও পাইনি। পাশের বাড়ি থেকে থেকে কিছু মুড়ি ও চিড়া দিয়েছিল। সেটা দিয়ে কয়েক বেলা কেটেছে। এখন আছেন দুঃশ্চিন্তায়। এ জায়গা ছেড়ে দিয়ে কোথায় উঠবেন?
সুবর্ণচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন সরকার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা পাওয়া গিয়েছে তা আমরা দিয়েছি। এছাড়া বেসরকারীভাবে অনেক সহায়তা করা হয়েছে। দুলাল মজুমদারের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি খোঁজ নেব।
এফএইচ