সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটসহ ৫ জনকে যৌথবাহিনী আটক করেছেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই আসামির মৃত্যু হয়।
গাইবান্ধার সাঘাটায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহরাব হোসেন আপেল ও শফিকুল ইসলাম নামে দুইজনের মৃত্যু হয়।
এরমধ্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল ইসলাম ও সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যান সোহরাব হোসেন আপেল। সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫) সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী এলাকার রোস্তম আলীর ছেলে ও শফিকুল ইসলাম (৪৫) একই এলাকার মালেক উদ্দিনের ছেলে। আপেল গোবিন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হওয়ায় চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট ও শাহাদত হোসেন পলাশকে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং রিয়াজুল ইসলাম রকিকে ভর্তি করা হয়েছে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
মোশারফ হোসেন সুইট (৪৫) সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দি গ্রামের আব্দুল গণি সরকারের ছেলে। এছাড়া শাহাদৎ হোসেন পলাশ সাঘাটা ভরতখালীর বাঁশহাটি এলাকার সেরায়েত আলীর ছেলে এবং রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮) উত্তর সাথালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।
মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি ও বাঁশহাটি এলাকা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরেই অসুস্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ও আপেল নামের দুইজনের মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসাধীন চেয়ারম্যান সুইট ও পলাশকে দেখতে আসেন গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহাবুব হোসেন। এসময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, অসুস্থ অবস্থায় সকালে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও আপেল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল রাতে যৌথ বাহিনীর একটি অপারেশন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় পরিচালিত হয়। যৌথ বাহিনীর অপারেশন পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়। অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা । উক্ত বাড়িতে প্রবেশের রাস্তায় ৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপিত ছিল। যার কারণে টহলের উপস্থিতি চেয়ারম্যান এবং তার সংলগ্ন লোকজন আগেই টের পেয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর চেয়ারম্যানের বাড়িতে কয়েকজনকে একসাথে মদ্যপানরত অবস্থায় পাওয়া যায় । পরবর্তীতে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, যৌথ বাহিনীর অভিযানের খবর পেয়ে অবৈধ অস্ত্রটি চেয়ারম্যানের অনুগত কেউ বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চেয়ারম্যানের বাড়ি, অফিস এবং চর এলাকায় অনুসন্ধান করে দেশীয় অস্ত্র, ককটেল এবং মদ তৈরির সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। যৌথ অপারেশন শেষে ৫ জন সদস্যকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। উক্ত পাঁচজনকে স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনা করে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। উপজেলা হাসপাতাল থেকে দুইজনকে শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ, বগুড়া এবং তিনজনকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় দুইজন সদস্যকে মৃত ঘোষণা করা হয়। যার কারণ ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, মোশাররফ হোসেন সুইট চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মসহ সাধারণ মানুষকে অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছিলেন। তিনিসহ তার ভাই সুজাউদৌলার নেতৃত্বে এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তোলেন। যমুনা নদীর চর দখলসহ দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ বালু মহল গড়ে তুলে ব্যবসা করেন। এতে ফসলি জমি নষ্টসহ কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে এলাকাবাসী। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান সুইট ও তার ভাইসহ সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে কয়েক দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
আরএ