সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রের মহড়া দেয়। এমনকি অস্ত্র ব্যবহারের দৃশ্যও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এসব অস্ত্রবাজিতে ছিল দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও। এদিকে গত ৩ সেপ্টেম্বর লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন থাকলেও আলোচিত আব্দুর রহমান বদি ও মহেশখালী পৌর মেয়র মকসুদ মিয়াসহ কক্সবাজারের অনেকে গুরুত্বপূর্ণ নেতার নামে ইস্যু করা লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা পড়েনি। মকসুদ মিয়ার নামে একটি শটগান ও একটি পিস্তল ইস্যু করা হয়েছিল ২০১৪-১৫ সালে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে ২০৫টি বৈধ অস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০৬টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে। বাকি ৯৯টি অস্ত্র কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্যদিকে, ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইস্যুকৃত সকল বেসামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা থানায় জমার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। জমা না দিলে অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে গণ্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অস্ত্রবাজসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আত্নগোপনে চলে যান। দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় পার হলেও একজন অস্ত্রবাজকে গ্রেফতার করতে না পারায় ছাত্র -জনতার মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের একাধিক মিছিল মিটিং এ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন অধিকাংশ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করেছিলেন। তারা অনেকটা পুলিশের উপস্থিতিতে সে অস্ত্রবাজি করেন। অস্ত্রবাজি প্রত্যক্ষ করে ওই সময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা তাদের প্রশংসা করেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য সূত্র মতে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তমের অস্ত্রটি বৈধ হলেও যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেনের অস্ত্রটি বৈধ নয়।
কক্সবাজারে এখনো বাকি ৯৯টি অস্ত্র জমা না পড়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অস্ত্রবাজির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী জানান, ২০২৪ সালের ৭ মে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরীর নামে একটি ‘ইতালিয়ান মডেল’ পিস্তল ইস্যু করা হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ৪০ রাউন্ড গোলাবারুদসহ পিস্তলটি জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, রুস্তম তার ইস্যুকৃত ৫০ রাউন্ড গোলাবারুদ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে ব্যবহার করেছে।
এদিকে কক্সবাজারের ছাত্র আন্দোলন দমাতে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে ছিল পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর শটগানও এবং সেই শটগানটি ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ উঠে যুবলীগ কর্মী জামশেদ আলম জনি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ দেশ টিভিকে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন না। এমনকি জনি নামের যুবককে তিনি চেনেন না। তাই এমন কিছু হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার শটগানটি তিনি জমা দিয়েছেন বলেও জানান।
জামশেদ আলম জনির পরিবারের পক্ষ থেকেও একটি সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। তাদের দাবি যে ভিডিও ফুটেজটি ভাইরাল হয়েছে সেটি জামশেদ আলম জনি নয়, শরীরের কাঠামোগত দিক বিবেচনা করলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। জনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের পরিবারের আন্দোলনের পক্ষেই অবস্থান নেন এবং হাসিনার পদত্যাগের পর তারা বিজয় মিছিলে সামিল হন।
এফএইচ