সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যটক, বাওয়ালি, জেলে ও মৌয়ালদের জন্য উন্মুক্ত হলো সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার।
খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলছে সুন্দরবনের দুয়ার। জেলে, বাওয়ালিরা স্ব স্ব স্টেশন থেকে পাস-পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে। একইসঙ্গে পর্যটকরাও এদিন থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।
বন বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে সুন্দরবনে সবার প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রেখেছিল বন মন্ত্রণালয়। তিন মাসের জন্য জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। রোববার থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।
খুলনার পাইকগাছা শান্তা বাজার এলাকার জেলেরা বলছেন, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের সুন্দরবনে মাছ ধরা যাবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা পাস-পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করব।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সেক্রেটারি নাজমুল আযম ডেভিড বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনের দ্বার খুলে দেওয়া হলেও তাতে পর্যটন ব্যবসায়ীদের তেমন একটি লাভ হবে না। কারণ, এখন পর্যটনের অফ সিজন। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটনের মৌসুম। তিন মাস পর্যটন বন্ধ থাকায় তাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ধার দেনা ও ব্যাংকের ঋণ করে বেকার হয়ে পড়েছে দেড় সহস্রাধিক পর্যটন শ্রমিক।
সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম খলিল জানিয়েছেন, জেলে, বাউয়াল ও মৌয়ালরা জীবন-জীবিকা নির্বাহে সুন্দরবনের প্রবেশের জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে। ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) হয়েছে ২ হাজার ৯০০টি।
সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান জানান, পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় পাঁচ শতাধিক ট্রলার চলে। সুন্দরবনে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের প্রায় এক হাজার ট্রলারচালক ও শ্রমিক বেকার জীবনযাপন করেন। তাদের সংসার চলে খুব কষ্টে ধার দেনা করে। পরিস্থিতি ভালো হলে এবার এই রেঞ্জে আসা পর্যটকদের জন্য আধুনিক লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, এখন থেকে জেলে ও বাওয়ালিদের সুন্দরবনে ঢোকার পাস (অনুমতি) দেওয়া হবে। এ জন্য আগে থেকে জেলে বাওয়ালির পাশাপাশি পর্যটক পরিবহনকারী ট্রলার মালিকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি আবু তালেব জানিয়েছেন, রোববার থেকে সুন্দরবনের প্রবেশ করতে পারবে জেলা, বাওয়ালী, মৌয়াল ও পর্যটকরা। এ জন্য করমজলসহ পর্যটন স্পটগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মোংলা ট্যুর অপারেটর মো. এমাদুল হোসেন বলেন, টুরিস্টদের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বুকিং পেলে রোববার থেকে টুরিস্টদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারব। দেশের বিভিন্ন স্থানের বন্যার প্রভাব আমাদের মোংলায় ও পড়বে। কেননা যারা ভ্রমণে আসবেন তাদের অনেকেই এখন বন্যার কবলে। তাই গত বারের তুলনায় এবার পর্যটকের পরিমাণ কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, আমরা বনজীবী ও টুরিস্টদের সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত। বনের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা, বন্য প্রাণী এবং নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে সকল ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ায় আজ থেকে বনজীবী ও টুরিস্টরা নিয়ম মেনে অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।
কে