সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আন্দিকোট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামের সন্তান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া।
বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার পর এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এ উপজেলার গণযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আসিফ মাহমুদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক পোস্ট করে। যা ইতিমধ্যে ব্যপক ভাইরাল হয়েছে।
ছোট বড় সকলের মুখে আসিফ মাহমুদের নাম। এলাকাবাসী সহ এ উপজেলার মানুষ এখন তাকে নিয়ে ব্যাপক আনন্দে-উল্লাসিত।
আসিফ ১৯৯৮ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। মো: বিল্লাল হোসেন মাস্টার ও রোকসানা বেগম দম্পত্তির ২য় তম সন্তান। ২০১৫ সালে ঢাকার নাখালপাড়া হোসেন আলী হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার পিতা বিল্লাল হোসেন মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার মাতা রোকসানা আক্তার একজন গৃহিনী। আসিফ মাহমুদ তার পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র সন্তান। তার বড় একজন ও ছোট দুজন বোন রয়েছে।
জানা যায়, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। প্রথমদিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে যে সে আন্দোলনের সমন্বয়ক। তখন আসিফ মাহমুদকে বাড়ীতে ফিরে আসতে অনুরোধ করে বাবা, মা ও বোনেরা। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আসিফ বলেন, আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন, আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসবো না। হয় গুলি খেয়ে মরবো না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরবো। এরপর থেকেই আসিফ মাহমুদের পরিবারে আতঙ্ক আর উৎকন্ঠা শুরু হয় বলে জানান তার ছোট বোন ইফাত জাহান লামিয়া।
তিনি আরো বলেন, ভাইয়া ৫ দিন নিখোঁজের সময় তার মা, বোনসহ পরিবারের সকলের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। ঘরে রান্না-বান্নাও হয়নি, বন্ধ থাকে পরিবারের সকলের খাওয়া দাওয়া। আমরা ঢাকাতে লাশ ঘরে গিয়েও ভাইকে অনেক খুঁজেছি। এখন আন্দোলন সফল হওয়ার আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই এমন খুনি, ফ্যাসিবাদী সরকার আর কখনো না আসুক।
আসিফ মাহমুদের পিতা বিল্লাল হোসেন জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। অজানা আতংক আর উৎকন্ঠা নিয়ে প্রতিদিন আসিফ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু ১৯শে জুলাই তার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর বিভিন্ন যায়গায় তাকে খোঁজ করেও পাইনি তখন আমরা এক প্রকার দিশেহারা হয়ে যাই। ২৩শে জুলাই ইত্তেফাক পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয় যে আসিফ মাহমুদকে গুম করা হয়েছে। তারপর আমরা শাহবাগ থানায় নিখোঁজের ডায়েরী করতে গেলে দায়িত্বরত ওসি আমাদের জিডি নেয়নি। সেখানে থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় যাই সেখানেও একই ভাবে আমাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে প্রতিটা ওয়ার্ডে খোঁজ করি কিন্তু আসিফের কোন সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালের লাশ ঘরে গিয়ে খোজাঁখুজি করেও পাইনি।
তারপর প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসিফের গুমের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাই। ২৪শে জুলাই হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এসময় তাকে গনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখান থেকে ২৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে আবারো তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করে জানায় আপনার ছেলে ডিবি কার্যালয় আছে এসে দেখে যান। আমি আর আসিফের মা সেখানে গিয়ে দেখা করলে তাদেরকে ছেড়ে দিবে বললেও পরে আর ছাড়েনি। ডিবি প্রধান হারুন সাহেব আমার থেকে ভিডিও রেকর্ড নিতে চেয়েছিলো যে সমন্বয়করা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় দিয়েছে কিন্তু আমি রাজি হইনি। ১ দিন পর আবারো ফোন করে আমাদের যেতে বলে তখন তাদের গাড়ী দিয়ে আসিফসহ আমাদেরকে বাড়ী পৌঁছে দেয়। তিনি আরো বলেন যে আসিফ মাহমুদ ছোট্টবেলা থেকেই একরোখা ছিলো। যেখানে অন্যায় দেখতো সেখানেই প্রতিবাদ করতো। আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হয়েছেন সে জেন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারেন এজন্য দেশবাসীর নিকট আমি দোয়া চাই। তাছাড়া তিনি এই আন্দোলনে নিহত সকলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়াসহ সকল সমন্বয়ক এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবিও করেন।
এফএইচ