সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সে খবর শুনে ঢাকার রাজপথে নামে সাধারণ মানুষের জনস্রোত। চারদিকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। এ যেন নতুন করে আরেকটি স্বাধীনতার স্বাদ পেল বাংলাদেশ। বিজয় মিছিলে ছিল ছাত্র-জনতার ঢল। সে মিছিলে শরীক হয়েছিল এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. রায়হান (১৮)। অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে সেও বিজয় মিছিলে আনন্দে দিশেহারা।
হঠাৎ গুলি এসে রায়হানের পিঠে ও মাথায় বিদ্ধ হলো। সঙ্গে সঙ্গে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লেন। মিছিলে থাকা অপর শিক্ষার্থীরা রায়হানেকে বাড্ডার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু তার আগেই নিভে গেল রায়হানের জীবন প্রদীপ। চলতি এইচএসসি পরীক্ষাও শেষ করতে পারলোনা রায়হান।
নিহত মো. রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রায়হান এ বছর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডায় একটা বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করেন। রায়হান পাশেই একটা মেসে থাকতেন। এক ভাই এক বোনের মধ্যে রায়হান বড়।
নিহত রায়হানের বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাড্ডায় এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে রায়হানকে ফোন দিই। কিন্তু সে ফোন না ধরে আরেক ছেলে ধরে বলে আংকেল রায়হানকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুনানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি সেখানে যাই। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি আমার ছেলের মরদেহ। তার আর পরীক্ষা দেওয়া হলোনা। আনন্দ মিছিলে যাওয়ায় তার কাল হলো।
রায়হানের চাচা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রায়হান মেসে জোহরের নামাজ পড়ছিল। নামাজ পড়ে সে মেসের বাইরে গিয়ে দেখে বিজয় মিছিল হচ্ছে। সে ওই মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি বাড্ডার থানার সামনে গেলে হঠাৎ গুলি চালায় পুলিশ। গুলি এসে রায়হানের পিঠে ও মাথায় বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রায়হান। শিক্ষার্থীরা তাকে একটা ভ্যানে করে হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। কিন্তু তার অগেই সব শেষ।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল মা আমেনা খাতুন। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর আবার জ্ঞান ফিরছে, আর চিৎকার করে বলছেন, আমার রায়হান কই? আমার বুকের ধন দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। কতো স্বপ্ন নিয়ে তাকে ঢাকায় পড়ালেখার জন্য পাঠিয়েছি। ছেলে আমাকে আর মা বলে ঢাকবেনা। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
নোয়ান্নই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ বলেন, রায়হানের বাবাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। আমি জানি তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। তার ছেলের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
আরএ