সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
সহকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির মাঝে পুলিশ সংস্কারসহ ১১ দফা দাবিতে বাগেরহাটে বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে। বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে নিজেদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে স্লোগান দিয়ে মাঠে নেমে আসেন বাগেরহাট পুলিশ লাইনের থাকা কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য।
এ সময় বিভিন্ন স্থানে হামলায় নিহত সহকার্মীদের হত্যার ঘটনা তুলে ধরে অনেক পুলিশ সদস্যকে কান্না ও চিৎকার করতে দেখা যায়। পুলিশের কনস্টেবল, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), উপ-পরিদর্শক (এসআই), পরিদর্শকদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে সেখানে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা। এ সময় সকল কর্মকর্তারা তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে।
বিক্ষোভকালে তারা পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন লাঞ্চনা-বঞ্চনার কথা তুলে ধরে। এ সময় তারা বিভিন্ন কর্মকর্তাদের অসধাচরণ ও ব্যক্তিগত কাজ করানোর বিচার চান।
তারা বলেন, পুলিশে সব ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সুবিধাবাদী বিসিএস কর্মকর্তাদের জন্যই সারাদেশে পুলিশ শত্রু হয়েছে, মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ সুপারদের কাছে বাগেরহাটের রামপাল ও মোংলা ওসির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া এবং পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে করে বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলার উদ্দীনের ব্যক্তিগত সহকারী ফিরোজুল ইসলামকে বাগেরহাট ছাড়তে সহযোগিতা করার বিষয়ে ক্ষোভ জানানো হয়। এ সময় দুই ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস ও দাবি আদায়ে কর্মবিরোতিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন এসপি ও এএসিপিরা।
পরে তারা পুলিশ লাইনের মাঝে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’ ‘এক দফা এক দাবি, পুলিশ সংস্কার পুলিশ সংস্কার’, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, চলবে না চলবে না’, ‘রাজনৈতিক গোলামি, চলবে না চলবে না’ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, সাত মাসের অন্ত:স্বত্বা পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের মনে অনেক ব্যথা। আওয়ামী লীগের তাবেদারি করতে গিয়ে আজকে পুলিশের সদস্যরা হত্যার শিকার হয়েছে। পুলিশের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়নি। সবই নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীরা নিহত হয়েছেন। আমরা এসব হত্যার বিচার চাই। আমরা মন খুলে কথা বলতে চাই, প্রয়োজনে পোশাক খুলে ভ্যান চালাব, তবু জনগণের বিরুদ্ধে গুলি চালাব না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
বিক্ষোভরত এএসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতার তাবেদারি করতে গিয়ে আমাদেরকে জনগণের বিরুদ্ধে দ্বার করিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ সদস্যরা জনগণের জন্য মরবে, পুলিশ সদস্যরা কখনও জনগনকে মারবে না। আমরা জনগণের পুলিশ হয়ে চাকরি করতে চাই। এসময় মোংলা থানার পালাতক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম ও রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমেন দাসের বিচার দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খানের রাজনৈতিক বক্তব্যের ফলে বাগেরহাটের স্থানীয় মানুষ ক্ষিপ্ত হয়েছে বলে জানান কয়েকজন কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা যে নিসংশতার শিকার হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সকল পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার করতে হবে। আমাদের ১১ দফা দাবি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার সাথে আমরা একমত পোষণ করছি।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান পুলিশ লাইনে আসেন। বিক্ষোভকারীদের সকল দাবির সাথে ঐক্যমত পোষণ করে তিনি বলেন, সকল হত্যাকাণ্ডের রক্তের শোধ নিতে হবে। বিক্ষোবকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাগেরহাট জেলা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
আরএ