সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী চলমান সহিংস ঘটনায় সাতক্ষীরায় পৃথক দুটি ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকিরসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও ১০/১২ জন। ঘটনা দুইটি ঘটে সাতক্ষীরার আশাশুনি ও সদর উপজেলায়।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা এবং সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে পৃথক ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ আহতদের সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাকনা গ্রামের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাহাজুর রহমান সাজুর ছেলে শেখ শাকের (২২), মৃত শেখ সুজাত আলীর ছেলে শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), মৃত শেখ আরিফুল ইসলামের ছেলে শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন আলম (২২), একই গ্রামের শেখ আজুয়ার রহমানের ছেলে সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ওয়ারেজ আলী মোড়লের ছেলে আনাস বিল্লাহ (২১), একই ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের নুর হাকিম ঘরামীর ছেলে আদম আলী (২৩), হিজলিয়া গ্রামের ছাত্তার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (১৬) ও সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের মৃত রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৬০)।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী জানান, সোমবার কয়েকশ’ বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের জাকির চেয়াম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইট পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে জাকির বাড়ির দোতালা থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০/১২ জন আহত হয়। এসময় ক্ষুদ্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। গুলিবিদ্ধ আহতদের চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনাস বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর মারা যান। এরপর তাদের মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুদ্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরই একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকেসহ তার সাথে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, মঙ্গলবার সকালে নিহতদের মরদেহগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিশ্বজিত অধিকারি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সদর হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দলবদ্ধ শতশত ব্যাক্তি আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আহমেদ হোসাইন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়াও রাত ৯টার দিকে মৃগাডাঙ্গা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে মৃগাডাঙ্গা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী তৌহিদ ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী জাহিদ হোসেন (২৮) ও ফারুক হোসেন নিহত হন। বৈকারি ইউপির চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অপরদিকে, বিক্ষুব্ধ জনতা সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর ও কলারোয়া থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে থানা থেকেই অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পুলিশ সদস্যদেরকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর দুর্বৃত্তরা পৃথক পৃথকভাবে থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে থানা ভবন। ভেতরে কক্ষ থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। থানার সকল দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই সুযোগে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার হামলা লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, দোকান-পাট, ব্যাংক, অফিস-আদালত খোলা ছিল। বাস না চললেও অন্যান্য যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। দুপুরে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় বলে জানায় ভোমরা কাস্টমসের ডিসি এনামুল হক।
আরএ