সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
নোয়াখালীতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতার বাস ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, রোববার (৪ আগষ্ট) সন্ধ্যার দিকে অসহযোগ চলাকালে অতর্কিতভাবে বেগমগঞ্জ উপজেলা (ভূমি) কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। পরে তারা সেখানে অগ্নিসংযোগ করে অফিসে থাকা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ লুট করে নিয়ে যায়। এরপরে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। সেখানেও ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তবে এর আগেই দূর্বৃত্তরা সরে যান।
বেগমগঞ্জ উপজেলা কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, কার্যালয়ে আগুন দিয়ে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপগুলো নিয়ে গেছে। পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মো. নাজমুল হাসান রাজিব অগ্নিসংযোগ করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দূর্বৃত্তরা সার্কেল অফিসে গিয়ে ভাংচুর করে কাগজপত্রে অগ্নিসংযোগ করেছে।
জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালী-২ সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন মোরশেদ আলম শপিং কমপ্লেক্সে হামলা চালায় একদল দূর্বৃত্ত। তারা সেখানে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করে। বিশেষ করে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
অন্যাদিকে, এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্বক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নোয়াখালী জলা শহরের রাজপথ ছিল ছাত্র-জনতার দখলে। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে জমায়েতের কর্মসূচি থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জোরালো ভাবে মাঠে থাকতে দেখা যায়নি।
রোববার (৪ আগস্ট) দিনব্যাপি অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরতরা। এসময় শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে নানান স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন হাতে দেখা যায়। অনেকের গায়ে ও মাথায় ছিল জাতীয় পতাকা।
স্থানীয়রা জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নোয়াখালী জেলা স্কুল এলাকায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে। ওই সময় কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শোনা যায়। পরে পুলিশ চলে গেলে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। তবে, পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।
এদিকে, শহরের মাইজদী বাজার এলাকায় অবস্থিত শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিথুন ভট্র ও তার ছোট ভাই জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্রের বাসভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। সংষর্ষে ছাত্রলীগের ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা চৌমুহনী পৌরসভায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে চৌমুহনী পৌরসভায় অগ্নিসংযোগ করে। তখন তারা পৌরসভার বেশ কয়েকটি গাড়িতেও অগ্নিসংযাগ করে বলে অভিযোগ করেন চৌমুহনী পৌরসভা মেয়র মো. খালেদ সাইফুল্লাহ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা বেগমগঞ্জ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায়। ওই সময় তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাক্টরি, বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ইট পাটকেল নিক্ষপ করা হয়।
সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা শহরে জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। অসহযোগের কারণে জেলা শহরে সব ধরনের দোকানপাট, মার্কেট ও বিতানগুলো বন্ধ দেখা যায়। সকাল থেকে জেলা শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। নোয়াখালী থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি কোনো ধরনের দূরপাল্লার গণপরিবহন ।
অন্যদিক, অফিসগুলোতেও সেবা প্রত্যাশীদের অন্যান্য দিনের তুলনায় সেবা নিতে কিছুটা কম দেখা গিয়েছে। তবে, বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে করে পুরো নোয়াখালী জুড়ে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের বিষয়টি শুনেছি। রাস্তাঘাট এমনভাবে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে সব জায়গায় পুলিশ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি অরও বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের কোনো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়নি। কোনো গুলিও ছোড়া হয়নি।
কে