সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
চলমান পরিস্থিতিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন পর্যটকশূন্য। সংরক্ষিত এই বনে পর্যটকের উপস্থিতি না থাকা এবং রেলপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ ও সড়কপথে যান চলাচলের পরিমাণও কম থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে বন্যপ্রাণীরা। সুনসান নিরবতায় স্বস্তিতে ঘোরাফেরা করছে বন্যপ্রাণী। অবাধ চলাচলে নিরাপদ পরিবেশে বন্যপ্রাণীর প্রজননে সহায়ক বলে দাবি সংলিষ্টদের।
সরেজমিনে রেল লাইন পার হলেই লাউয়াছড়া বনের গাছে গাছে বন্যপ্রাণীদের লাফালাফি, খাবারের সন্ধানে তাদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। উল্লুকের চেঁচামেচি ও পাখির কিচিরমিচিরে নতুন রূপে ফিরতে শুরু করেছে লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া ফটকের সামনে ব্যবসায়ী আল আমীন, আব্দুল মন্নান জানান, চলমান পরিস্থিতিতে পর্যটকদের কোন উপস্থিতি নেই। মানুষ জন আসায় তাদের ব্যবসা বানিজ্য একে বারে মান্দা। তবে উৎফুল্ল প্রাণীদের লাফালাফি, অবাধ বিচরণ ও খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর চিত্র চোখে পড়ে। যা অন্যান্য সময় এমনটা দেখা যায় নাই।
বনে পঁচিশ বছর ধরে কাজ করেন মোস্তফা মিয়া। তিনি বলেন, ১২৫০ হেক্টর জমির লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে উল্লুক, মায়াহরিণ, হনুমান, নানা জাতের বানর, বন মোরগ সহ অসংখ্য বন্যপ্রানী রয়েছে। বনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড়ে এসব বন্যপ্রানী দেখা খুব কষ্টকর ছিল। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে লাউয়াছড়া বনে এখন পর্যটক নেই। এতে বনে ফিরে এসেছে নতুন রূপ। সকাল থেকে উল্লুকের আওয়াজ, বিভিন্ন প্রজাতির বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাকে বনটিতে ফিরে এসেছে হারানো প্রাণ।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন আহমদ বলেন, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। গত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক বনের গভীরতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। প্রাচীনতম গাছগাছালি চুরি হয়ে যাওয়া, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেলপথে ট্রেন চলাচল, সড়কপথে যানবাহনের হর্ন, অত্যধিক দর্শনার্থীর বিচরণ, হইহুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম এই সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণী। এই সংকটময় অবস্থার মধ্যেও বর্তমান সময়ে পর্য়টক না আসায় বন্যপ্রানীরা মুক্ত জীবন যাপন করছে বলে মনে হচ্ছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দায়িত্বরত হিসাব রক্ষক কাম এডমিন আফজালুর রহমান বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এই সময়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে সাতশত দেশি-বিদেশি পর্যটক আসতেন। তখন টিকিট বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আয় হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন গড়ে ৭ থেকে ৮ জন পর্যটক আসছেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ সহকারি বন সংরক্ষক, জামিল মোহাম্মদ খান জানান দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে লাউয়াছড়া উদ্যানের গেট বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকরাও আসতে দেখা যায়নি। পর্যটকশূন্য, ট্রেন চলাচল বন্ধ ও যানবাহন চলাচল কম থাকার কারণে বন্যপ্রাণীর মধ্যে স্বস্তিবোধ হওয়া স্বাভাবিক। পর্যটকের হইহুল্লোড়না থাকায় বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরনে তাদের তাদের বংশ বিস্তার বেশি হবে ।
১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার পর থেকে সেখানে পর্যটকের ঢল নামছে। এই উদ্যানে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তণ্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।
লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ সময়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০।
এফএইচ