সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় প্রায় ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে আলফিকে আটক ও কারাগারে পাঠানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
তবে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে জানিয়েছে নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ ও ১৯ জুলাই সংঘাত-সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে যাচাই বাছাই করার সুযোগ না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত হয়েছেন।
আটক শিশু আলফি শাহরিয়ার মাহিম গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল চকবাজার এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আলফি শাহরিয়ার মাহিম রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
জানা গেছে, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। ১৭ জুলাই তাজহাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায় বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন।
এদিকে, ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় বুধবার (৩১ জুলাই) আফলি শাহরিয়ারের বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এর আগে আলফিকে আটকের বিষয়টি অগোচরেই থেকে যায় সংশ্লিষ্ট সবার।
মাহিমের বোন সানজানা আকতার স্নেহা জানিয়েছেন, ১৮ জুলাই সে কলেজের উদ্দেশে বের হয় এবং পরে জানতে পারে সেদিনের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে যায় এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আমরা ওইদিন বিকেলে ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। স্থানীয়রা কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। তবে কোন হাসপাতালে সে ভর্তি আছে আমরা তার খোজঁ পাচ্ছিলাম না।
স্নেহা জানান, ওই দিন রাত ১০টার দিকে বাবার কাছে পুলিশের একটা ফোনে আসে এবং জানায় আলফি পুলিশ হেফাজতে আছে, পরদিন সকালে মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে চিন্তার কিছু নেই। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে বারণ করা হয়।
এরপর আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কোথায় আছে সে তার কোনো হদিস পাচ্ছিলাম না। ১৯ জুলাই সকালে পুলিশ জানায়, ওই নামে কেউ নেই। এরপর ওইদিন আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় আদালত থেকে কল আসে মাহিমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা আদালত থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছিলেন। আমাদের আশ্বস্ত করেছেন মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কমিশনার স্যার। কিন্তু সম্ভব হয়নি।
মাহিমের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় শিশু মামলার নথি ট্রান্সফার করতে গিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। আগামী ৪ আগস্ট এই মামলার জামিন শুনানি রয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ শাহজালাল।
কী বলছে পুলিশ
তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান বলেন, ১৭ জুলাই আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) জানান, ১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিন্সের প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া অবস্থায় আটক হয় মাহিম। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। যেহেতু ১৮ ও ১৯ তারিখে সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ে পুরো বাহিনী ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই বাচাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত ২০ তারিখ থেকে আমরা যাছাইবাচাই সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করছি।
আবু মারুফ বলেন, পরে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। রংপুর পুলিশ কমিশনার অবগত হওয়ার পরই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, মাহিম আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল মাত্র। ওই ঘটনায় জড়িত ছিল না। জামিনের মাধ্যমে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
যা বলেন আইনজীবীরা
আলফি শাহরিয়ার মাহিমের আইনজীবী বাহারুল ইসলাম বলেন, শিশুদের মামলার বিচার হবে শিশু আদালতে। আগামী ৪ আগস্ট তার জামিন শুনানি।
তিনি বলেন, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর বিচার কখনও পূর্ণবয়স্ক আসামির সঙ্গে হওয়ার সুযোগ নেই।
রংপুর বারের আইনজীবী রায়হান কবীর বলেন, আমরা থানায় যোগোযোগ করেছি, আমাদের বলেছিল থানায় নেই, অথচ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটা বেআইনি।
তিনি বলেন, আমরা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখেছি তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। তাকে কেন মামলায় ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলো। জবাবদিহিতা না থাকায় আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের পূর্ণ বয়স্ক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এতে শিশুরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
আরএ