সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ভূমিদখল, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম খানের বিরুদ্ধে। দেশ টিভির অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে তার নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম খানের বিরুদ্ধে এই সম্পদের তথ্য গোপন করতে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার হলফনামায় তথ্য গোপন করারও অভিযোগ উঠেছে। তার এই অঢেল সম্পদের উৎস কি তা যাচাইয়ে দুদক, গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাষ্ট্রপ্রধানের দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে দেশ টিভিতে একাধিক সংবাদ প্রচারের পর সেই দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৪ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আবু আহাদ।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম খান। খুব বেশিদিন হয়নি তিনি ও তার পিতা মৃত কফিল উদ্দিন পাটুরিয়া অরিচা ফেরিঘাটে করতেন সিদ্ধ ডিমের হকারি। থাকতেন উপজেলার শিবালয় ইউনিয়নের দাশকান্দি এলাকায় জরাজীর্ণ কুরে ঘরে। তারপর করতেন এক সময়ের পরিচিত তেল ব্যবসায়ী ওয়াজেদ মিয়ার দোকানের কর্মচারির কাজ। অভিযোগ রয়েছে সেখান থেকে সক্ষতা হয় চোরাইতেলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ঘাট এলাকায় গড়ে তোলেন তার ভাগ্নে জেলা বিএনপি নেতা আলালের নেতৃত্বে এক বাহিনী। তারপরই শুরু হয় তার ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, তেলচুরিসহ নানা অপকর্ম। গড়ে তুলেন এক নতুন সম্রাজ্য। গড়তে থাকেন সম্পদের পাহাড়। টাকার দাপটে ভাগিয়ে নেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ।
তার সম্পদের হিসাব রাখতে রেখেছেন অন্তত ১শ' ম্যানেজার। এরই মধ্যে সম্পদ করেছেন মানিকগঞ্জ শহরে ৫ তলা বাড়ি, ঢাকায় রয়েছে মোহাম্মদপুর বাবর রোডের সমবায় মেট্রোপলিটন হাউজিং সোসাইটির বাড়িসহ অন্তত ১২টি বাড়ি, ৮টি লঞ্চ, ৭টি তেলের পাম্প, সামুদ্রিক শিপ, তেলের জাহাজ, ট্র্যাংকার, পরিবহন, মিল কারখানা, অগনিত জমি, বিভিন্ন ক্যাটাগরির ড্রেজিং, ঢাকা টু বরিশাল চলে বিলাস বহুল ৫টি লঞ্চ। আব্দুর রহিম খানের নামে বিদেশেও রয়েছে বাড়ি ও ব্যবসা। তার এই সম্পদের উৎস কি তা যাচাইয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন আবেদন করেন শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহাদ।
হলফনামা অনুসন্ধান করে জানা যায়, তার আয় দেখানো হয়েছে টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে নগদ টাকা ১০ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ২১৯ টাকা। স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪০ টাকা। তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৪ টাকা। স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ টাকা। তার ব্যাংকের নিকট দায় দেখানো হয়েছে ২ কোটি টাকা। তবে স্থানীয়দের ভাষ্যমতে এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক প্রায় হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ারও।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আবু আহাদ জানান, একজন ডিমের হকার ও তেলের দোকানের কর্মচারী হয়ে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন আব্দুর রহিম খান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার হয়। তাই তার এই সম্পদের উৎস কি তা যাচাইয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক কর্মকর্তা অভিযোগ পেয়েছেন স্বীকার করে বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আব্দুর রহিম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্য নয় বলে দাবি করে বলেন, তিনি ৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করে এই সম্পদ করেছেন। তার সকল সম্পদের ফাইল আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, ব্যক্তির দায়ভার কখনোই দল নেবে না। বিষয়টি তদন্তের বিষয় । আব্দুর রহিমের দুর্নীতি যদি তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়, তবে দলের জন্য ক্ষতিকর বলেও জানান তিনি।
আরএ