সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
ঢাকার রামপুরা প্রাইমারি স্কুলের ৩য় শ্রেণির ছাত্র তামিম শিকদার (১০) বন্ধুদের সাথে বল খেলতে গিয়েছিল ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বিকেলে। ওইদিন রামপুরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে।
জানা গেছে, তার বাবা একজন রিকশাচালক। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তামিমের মা-বাবা এখন পাগলপ্রায়। সহপাঠীদের সামনেই বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শিশু তামিম। হাসপাতাল থেকে লাশ পেলেও টাকার অভাবে তার লাশ ভাঙ্গার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করতে পারেননি তারা।
আরও জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের খাপুরা গ্রামের জুয়েল শিকদার একজন রিকশাচালক। ১৫ বছর আগে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যান। সেখানে রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন। অভাব-অনটনের মধ্যে রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চলান। নিজের বলতে জায়গা-জমি ঘর-দরজা কিছুই ছিল না। গ্রামের বাড়ি খাপুরা গ্রামে মাঝে মধ্যে এসে অন্যের ঘরে থাকতেন। তাদের একমাত্র ছেলে ছিল তামিম।
গুলিতে নিহত তামিমের বাবা জুয়েল শিকদার জানান, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে তামিম সহপাঠীদের নিয়ে রামপুরা এলাকায় ফুটবল খেলতে যায়। তার পাশেই রাস্তার ওপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। সকল শিশুরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল।
তিনি আরও জানান, অন্যান্য শিশুদের মাধ্যমে জানতে পারি- হঠাৎ তামিম চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়ে। সবাই দেখে তামিমের বুক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তারা আমাদের বাসায় এসে খবর দিলে আমরা দৌঁড়ে গিয়ে দেখি তামিমের বুকে একটি গুলি লেগেছে। তামিমকে রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তামিমকে ভাড়া বাসার সামনে নিয়ে আসি এবং ওই দিনই রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তামিমের চাচা মিরাজ শিকদার বলেন, আমার বড় ভাই জুয়েল শিকদার অনেক গরিব মানুষ। ১৫ বছর আগে তিনি বাড়ি থেকে ঢাকা রামপুর এলাকায় গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে মা, বোন, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান তামিমকে নিয়ে রামপুরা এলাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো। বছরে ২/১ বার ভাঙ্গার খাপুরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। শুক্রবার বিকেলে সংবাদ পাই, আমার ভাতিজা তামিমের বুকে গুলি লেগেছে। পরে আমার ভাই ও ভাবিসহ সকলে তামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা তামিমকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ও দেশের পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমরা কেউ ঢাকায় যেতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমার ভাতিজা তামিমকে হারিয়ে তার দাদি, ফুফু বাবা-মাসহ সবাই এখন পাগলের মতো হয়ে গেছে। শুনেছি সরকার নাকি অনেককে সহযোগিতা করছে। কই সরকার থেকে তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার মতো তাদের কোনো সামর্থ্যও ছিল না। আমরা ভাঙ্গা থেকে টাকা পাঠাবো, তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরে ওই দিন রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তামিমকে দাফন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় নিহতদের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি শিশু একজন কলেজছাত্র-সহ মোট তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরএ