সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আচঁ ছিল ঢাকার প্রবেশ মুখ সাভারে। টানা তিন দিনে সাভারে ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে কারফিউ শিথিলের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশপাশের এলাকা। জমে উঠছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটার স্থানগুলো।
এদিকে, মহাসড়ক ও সড়কে আন্তঃপরিবহনের সাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দূরপাল্লার যানগুলো। এছাড়া জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২৪ ঘণ্টায় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। এতে স্বাভাবিক হচ্ছে রাজধানীর সন্নিকটে থাকা সাভারের জীবনযাত্রা। বেলা ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল সময়ে স্বাভাবিকভাবেই চলছে সবকিছু। তবে সাভার আশুলিয়ার শিল্প কারখানাগুলো বিশেষ নিরাপত্তায় স্বাভাবিক নিয়মে চলছে উৎপাদন কাজ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আগের নিয়মে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। বেচাকেনাও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রাস্তাতেও মানুষের চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। সাভারের গেন্ডা, হেমায়েতপুর, রেডিওকলোনী, আশুলিয়ার বাইপাইল, শ্রীপুর এলাকায় প্রচুর মানুষের সমাগম ছিল। জরুরি রপ্তানি পণ্য সরবরাহের জন্য অনেক পোশাক কারখানা চালু রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল প্রচুর। যানবাহনগুলো স্বাভাবিকভাবে চলছে। এছাড়া আন্দোলন ও কারফিউকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন দেশের বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। আড়ৎ ও বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। আর এতে বেড়ে যায় সবজিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম। এতে করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ছে, কমছে দাম। বাজারে স্বস্তি ফিরছে বলে জানান সাধারণ মানুষ।
রহমান নামের এক পোশাক শ্রমিক জানান, গত তিন ধরে পরিবার নিয়ে আতঙ্ক নিয়ে ছিলাম। ইন্টারনেট ও ডিস লাইন না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করতে হয়েছে তাদের। এছাড়া বাইরে ঝামেলা থাকায় ঘর ছাড়া তেমন বের হয় নাই। তবে কারফিউ শিথিল হলে অফিস চালু হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে হচ্ছে। এতে করে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেছেন তারা। তবে ছেলের স্কুল চালু না হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
সাভারের আমেনা বেগম নামের আরও এক পোশাক শ্রমিক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আতঙ্কে দিন পার করেছেন তিনি। চোখের সামনে এমন সহিংসতা আর কখনও চোখে পড়েনি তার। যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে এখন। তবে গত দুদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থাকায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। কিন্তু সন্তানদের বাইরে পাঠাতে পারছেন না। এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তার।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আড়ৎ বাজার করতে আসা মিজানুর নামের এক বৃদ্ধ জানান, বাসায় কোনো বাজার নেই, তাই বাধ্য হয়ে সকাল সকাল আড়ৎ এসেছেন । এর আগে বাজার করতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে। সবজিগুলো ১০০ টাকার নিচে ছিল না। এছাড়া কাচাঁমরিচ দাম ছিল পাঁচ গুণ। তবে কারফিউ শিথিল হওয়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ১২০ টাকা করে যেখানে বেগুন কেজি ছিল এখন তা ৭০ টাকা কেজিতে এসেছে। কিন্তু পেয়াজ ও আলুর দাম কমেনি। মাছ মাংস দামও একটু কমেছে।
পিয়ার আলী নামের এক সবজি ব্যবসায়ী জানান, বাজারে এখনও সবজি আসছে। আগের তুলনায় দামও কম পাচ্ছেন, তাই ক্রেতাদের স্বল্প দামে দিতে পারছেন। কারফিউ চলাকালে কাচাঁবাজারে পণ্য আসতে পারলেও ব্যবসায়ীরা ভয়ে আসতে পারেনি। এছাড়া এই ব্যবাসয়ীরা টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে পারেনি। এই সুযোগে আড়ৎদাররা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে এখন দেশ স্বাভাবিক হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। যদি পরিস্থিতি ঠিক থাকে তাহলে সবজিতে দাম আরও একটু কমবে বলে জানান তিনি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে সড়ক, মহাসড়ক ও বাজারসহ বেশ কিছু স্থানে টহল টিম রেখেছি। সেই সাথে যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের থানার নাম্বার ও ৯৯৯ নাম্বার যোগাযোগ করলে আমাদের বিশেষ টিম পৌঁছে যাবে। গত কয়েকদিনের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা প্রয়োজন তাই করব।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা অংশ সাভার আশুলিয়ায় অবস্থিত। এখানে কয়েক লাখ তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করে। তাদের ও কারখানার নিরাপত্তার জন্য আমাদের পুলিশ বানিহী সর্বদা কাজ করছে। কারখানাগুলো তাদের আগের নিয়মে চলতে পারবে সে জন্য আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আরএ