সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
বন্যার পানি নেমে গেলেও কাজ কর্মহীন বানভাসিদের খাদ্য ও অর্থের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এদিকে নদী ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙন কবলিতরা। এই মহাসঙ্কট নিয়ে গত ২০ দিন ধরে দিনপার করছে তিস্তা পাড়ের লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
জানা যায়, গত ১৭ জুনের পর থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত উজানের ঢলে ও ভারি বর্ষণে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বসতভিটা পানির নীচে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে প্রায় দশ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে নদীর পানি কমলেও ভাঙন থামছে না। দুদফা বন্যায় কৃষকের ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছে। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে সঙ্কট। নষ্ট হয়েছে গ্রামীণ কাচা-পাঁকা সড়ক।
প্লাবিত হওয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ চাল ও শুকনো খাবার কিছু মানুষ পেলেও অধিকাংশ বানভাসির প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা। অন্যদিকে বন্যার সময় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় তিস্তা পাড়ের মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের লাইজু হোসেন জানান, নানা সঙ্কটে অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। সমস্যা আমাদের ঘিরে ধরেছে। আয় রোজগার নেই। খাবার কেনার টাকা নেই। পানির মধ্যে দিয়ে সার্বক্ষণিক চলাচল করায় নারী-পুরুষ শিশু অনেকের হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কটে। এছাড়াও গবাদি পশু নিয়েও সঙ্কটে রয়েছি। তাদেরকে খাবার দিতে না পারায় গবাদিপশুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনপার করতে হচ্ছে।
এছাড়াও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৩০টি বাড়ি। অসহায় মানুষেরা জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সবচেয়ে বেশি ভাঙন এলাকা হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কৃষি জমিতে ধান লাগানো বালু দিয়ে ভরাট হয়েছে। রাস্তাঘাট বাঁধ সব ধসে গেছে। গত কয়েকদিনে কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে এখন পর্যন্ত ১৪১টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারি সহায়তা এখনও আমরা দিতে পারিনি।
এদিকে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, ১ম ও ২য় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমির পরিমাণ মোট ৬৪.৬০ হেক্টর ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পরিবার ২১ হাজার ৮শ‘ ৫০ জন। এতে প্রায় ১৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসাদের। তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আরএ