সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
দেশ স্বাধীন অইলো। আমগোর গ্রামডা দুই ভাগ অইলো। অর্ধেক ভারতে। আর অর্ধেক আমরা। ৫২ বছর অইলো। অহনও আমরা আগের মতোই। আমগোর দু:খ কেউ দেহেনা। এডা সেতুর লাইগা আমরা কত নেতা, মেম্বার চেয়ারম্যান গোরে কইলাম। কেউ দিলো না। এডার লাইগা মেলা কষ্ট অয়।
কথাগুলো বলছেন, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি গ্রামের কৃষক আদিবাসী সুরেন্দ কোচ। তিনি বলেন, যাতায়াতের এডা পথ পোলাপানগোরে কষ্ট আরো বেশি। কালাঘোষা নদীর ওপর এডা সেতু অইলে এই কষ্ট করতে অইবো না।
তার প্রতিবেশী প্রেমানন্দ কোচ বলেন, ভোটের লাইগা অনেকে আয়ে। মেলা কতা কয়। সেতু দিব। ভোট অইলে আর আয়েনা।
একই গ্রামের আদিবাসী নারী নাইবালী কোচ বলেন, বেডা মানুষরা কাপর তুইলা যাইতে পারে। আমরাতো কাপর ভিজাইয়া যাই। এই সেতু অইলে আমগোর মেলা উপকার অইবো। তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে মাঝে মধ্যেই জোয়ার আসে। নদীতে পানি ভইরা যায়। অহন চলাচল করতে পারিনা। কোনো মানুষ অসুখ অইলে চিকিৎসাও করাতে পারি না। ছেলে মেয়েরা পড়ালেহা করতে যাইতে পারে না। হাতির সমস্যাতো আছেই। এভাবেই আক্ষেপ করে ওই নারী আরও বলেন, আমরা কি সারাজীবন এভাবেই কষ্ট করমু?
এই দুর্ভোগের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ওঠে আসে এমন চিত্র।
গ্রামবাসীরা জানান, হালচাটি গ্রামে প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসবাস। প্রায় সবাই আদিবাসী। তবে কোচ সম্প্রদায়েরই পরিবারের সংখ্যাই বেশি। গ্রামটির উত্তরে ভারতের বারাংগাপাড়ার হালচাটি গ্রাম। স্বাধীনতার আগের একই গ্রাম ছিল। পরে সীমানা ভাগ হলে গ্রামটি ভাগ হয়ে যায়। গ্রামের মাঝ দিয়ে হয় কাটাতারের বেড়া। বিভক্ত হয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা। ভারত থেকে এ গ্রামের মাঝ দিয়ে নেমে এসেছে কালাঘোষা নদী। শুকনো মৌসুমে এ নদীতে থাকে হাটু পানি। বর্ষা এলে মাঝে মধ্যে আসে জোয়ার। পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে নদী। কয়েকদিন বন্ধ থাকে হালচাটিসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচল। চরম বিপাকে শতশত মানুষ। তাদের চলাচলের সড়কটিও দু’পায়ে পাহাড়ি পথ। চলেনা কোনো যানবাহন।
স্থানীয় শিক্ষক যুগল কিশোর কোচ বলেন, কেউ অসুস্থ্ হলে তাকে কাধেঁ করে নিতে হয় প্রায় এক কিলোমিটার। এরপর বর্ডার সড়ক। আমরা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্ভোগের কথা বলি। তারা শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এখানে সেতু হলে হালচাটি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামবাসীদের চলাচলে দুভোর্গের অবসান হবে। বদলে যাবে গ্রামবাসীদের জীবনমান।
এ ব্যাপারে উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকসী বলেন, আমরাতো কোনো বরাদ্দ পাইনা। চেয়ারম্যানরা উদ্যোগ নিলে ত্রাণের টাকায় সেতু করতে পারে। এ বিষয়ে হালচাটি গ্রামবাসীসহ ওই এলাকায় যাতায়াতকারীদের দুভোর্গের স্বীকার করে কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সেখানে সেতু নির্মাণ হবে। তিনি আরও বলেন, আমারতো সময় শেষ। সেখানে প্রশাসনের লোকজনসহ বিজিবির সদস্যরাও চলাচল করে। বর্ষা এলে চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়। কালাঘোষা নদীর ওপর সেতু হবে। এ স্বপ্ন হালচাটি গ্রামবাসীসহ যাতায়াতকারীদের। এতে বদলে যাবে গ্রামবাসীদের জীবনচিত্র।
এফএইচ