সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
শত অভাব অনটন দমাতে পারেনি মেধাবী ছাত্রী সোনিয়া আফরিনকে। হাজার কষ্টকে পেছনে রেখে এগিয়ে চলেছে সোনিয়া। ভর্তি যুদ্ধ পাস করে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বিইউপি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালখার সুযোগ ঠিকই পেয়েছে। কিন্তু তার পড়াশানার পথে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা।
সোনিয়া আফরিন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজলার কুশাডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র ছানোয়ার হোসেন ও শাহানাজ পারভীনের সন্তান।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে সোনিয়া ছোট। বড় ভাই আব্দুল্লাহও লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে অর্থাভাবে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। তিনি কলজেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পরিবার থেকে খরচ বহন করত না পেরে লেখাপড়া ছেড়ে এখন বাবার সঙ্গে দিনমজুরর কাজ করছেন। তাদর সামান্য আয় দিয়ে চলে ৬ সদস্যের সংসার। নানাবিধ চাহিদা আর অভাব যেন নিত্য সময়ের সাথী তাদের পরিবারে।
ছোটবেলা থেকে দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী সোনিয়া। অভাবের সংসারে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আর্থিক সংকটের কারণ তার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া অনিশ্চয়তার মুখে।
অভাব ও সমস্যা নিয়ে এতাদূর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও এবার থমকে গেছে তার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির স্বপ্ন। সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে দক্ষ বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে সোনিয়া।
২০২১ সালে ডিঙ্গদহ সোহরাওয়ার্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠ থেকে এসএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২৩ সাল চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিত জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ৩৬৬, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র বি ইউনিট ৪১১ ও সি ইউনিট ৪৩৫, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ ইউনিট ৭৭৩ বি ইউনিট ৬২, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বি ইউনিট ৮৯তম স্থান অধিকার করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) সমাজ বিজ্ঞান ও আইন বিভাগ ভর্তিরও সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু পরিবার টাকা জোগার করতে না পারায় ভর্তি হতে পারছে না সোনিয়া। সোনিয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর। অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোরকমে চলে ৬ সদস্যর পরিবার। তাদের ৩ শতক ভিটবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নাই।
গত সোমবার বিকেল যাওয়া হয় সোনিয়াদের বাড়িতে। দেখা যায়; মাত্র ৩ শতক জমির ওপর দুটি ছাপড়া ঘর (কুড়েঘর)। সেখানেই সোনিয়াসহ পরিবারের লোকজন বসবাস করেন। একটি ঘরে ঢুকে দেখা যায় সোনিয়া একটি ছোট চৌকির ওপর বই ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি রেজাল্ট নিয়ে বসে আছে। পেছনেই রয়েছে একটি ভাঙ্গাচোরা টেবিল। সেখানে বেশকিছু স্কুল-কলেজের বই। তার মধ্য অধিকাংশ বইয়ের সৌজন্য সংখ্যা লেখা রয়েছে।
এসব বিষয় জানতে চাইলে সোনিয়া আফরিন বলেন, আমি গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি। সেখান আমার যেসব স্যার এবং ম্যাডাম ছিলেন তারা আমার অনেক সহযাগিতা করছেন। আমি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো ছিলাম। যার কারণে প্রত্যেক স্যারই আমার প্রতি বিশেষ যত্ন নিয়েছেন। সেই সময় যদি তারা আমার পাশে না দাঁড়াতেন তাহলে তখনই আমার পড়াশানা থমকে যেতো। তাদের প্রচেষ্টায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। সেখানও স্যাররা আমাকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রাইভেটের ক্ষেত্রে আমি ইংলিশ পড়তাম এহসানুল হক স্যারের কাছে। তিনি আমাকে নিজের বোনের মতো করেই মানুষ করেছেন।
তাদের কাছ থেকেই মূলত আমার ইংরজির ভিত শক্ত হয়। তারা দুই ভাই আমার অনেক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও আমার সাফল্যের পেছেনে যার ভূমিকা অনেক বেশি তিনি হলেন রাকিবুল হাসান। বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসে কর্মরত রয়েছেন। ডিঙ্গেদহ তার একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। সেখানে আমি পড়েছি। সেখান থেকে আমার যাবতীয় পড়াশোনার খরচ ও সৌজন্য কপি বই তিনিই আমাকে দিতেন। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের থেকে কম ভাবেননি। হয়তো তার জন্যই আজ আমি এতোদূর আসতে পেরেছি।
সোনিয়া জানায়, শত কষ্টের মধ্যেও প্রাথমিক, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাসও করেছি। কিন্তু মনে হয় টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারব না। আমি পড়তে চাই, এজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে একদিন ঠিকই আমি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
সোনিয়ার পিতা ছানায়ার হোসেন বলেন, ‘কষ্ট করে মেয়েকে এইচএসসি পাস করাইছি। মেয়েটা আরও পড়তে চায়। কিন্তু সেটা মনে হয় আর হবে না।’ সংসার চালানোর সঙ্গে আলাদা কিছু করার সাধ্য কুলায় না। তারপরও আমার মেয়ে কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন তার ভর্তি খরচ, যাতায়াতসহ ওখান কয়েক মাস থাকার খরচ দেওয়ার মতো আমার সামর্থ্য নেই। যদি আপনারা আমাদের সহযাগিতা করেন তাহলে আমার মেয়ে একদিন বড় কিছু হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ূন কবীর বলেন, সোনিয়া আমার ওয়ার্ডেরই মেয়ে। ও অনক মধাবী। ছোটবেলা থকই ভালো রেজাল্ট করে আসছে। তবে তার পরিবারর আর্থিক অবস্থা ভালো না। শত অভাবর মধ্যই অনেক কষ্ট করে সে লেখাপড়া চালিয়ে এসেছে। আমিও বেশকিছু সহযাগিতা করছি। এবার সে উচ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সবগুলাতেই ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করছে। আর্থিকভাবে সহযোগিতা পেলে মেয়েটি পড়াশানা করত পারতো।
আমি জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদসহ সমাজের বিত্তবানদের আর্থিক সহযাগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি।
সোনিয়া আফরিন স্বপ্ন দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার। এখন দরকার সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা।
জেবি