সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
আপেল-আঙুর-খেজুরের পরিবর্তে বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দেওয়ায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী জাতীয় যুবজোটের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আমি একটু আগে মোবাইলে দেখলাম, এক মন্ত্রী বলেছেন- রোজার সময় খেজুর আর আঙুর দিয়ে ইফতার কইরেন না, বরই দিয়ে করেন। আল্লাহ, কী বলব বলেন! নিত্যপণ্যের মূল্যে মানুষ জর্জরিত। আপনি (মন্ত্রী) মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই ধরনের মন্ত্রীকে এখনই....লাথি মেরে বের করে দেন।
তিনি আরও বলেন, কত বড় সাহস! বরই দিয়ে! বরইয়ের মুখী ঢুকাই দিব তোমার। যুবসমাজ জাগো। বরইয়ের বস্তা ওই মন্ত্রীর বাসায় ফেলো। আমি বরই দিয়ে ইফতারি করব, আর তুই খেজুর আর আঙুর খাবি। সাহস থাকে তো বল। খেজুর আর আঙুরের আমদানি নিষিদ্ধ কর। কর নিষিদ্ধ। খেজুর আর আঙুর আমদানি করবা, গরিব মানুষ বরই খাবে, তুমি আঙুর আর খেজুর খাবা, তা হবে না, হা হবে না।
জাসদ সভাপতি বলেন, মাত্র দুমাস হলো নির্বাচন শেষ হলো। একটা উত্তাপহীন রাজনীতির কথা ছিল। কিন্তু একটা গুমোট ভাব, কোনো উত্তেজনা নেই। বিরোধিতার মতো রাজনৈতিক যুদ্ধের ভেতরে নির্বাচন কখনো ভালো হয় না, তাই হয়েছে। কমতি আছে, ঘাটতি আছে। কিন্তু দিনের শেষে বাংলাদেশের এত বিরোধিতার মুখেও নির্বাচনের রাজনীতির অনিশ্চয়তা দূর করে নির্বাচনটা হয়েছে। একটা স্বস্তি এসেছে। কিন্তু নিম্নআয়ের মানুষ, দিন আনে দিন খায়, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে কোনো স্বস্তি আসেনি। তারা পেটের জ্বালায় জর্জরিত। তেল, নুন, পেঁয়াজ, চিনি, আদা, রসুন, মরিচ, যেটাতেই হাত দেয়, হাতে পুড়ে যাচ্ছে। সকালে একদাম, বিকেলে ডাবল দাম।
ইনু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হুংকার ছাড়ছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীরা চিৎকার করছেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, কিন্তু দাম কমছে না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাহলে ব্যর্থ কে? শাসন ব্যর্থ! কেন তারা কথা শুনছে না? এটা কি সিস্টেমের দোষ, মুক্তবাজার অর্থনীতির দোষ, নাকি যারা দাম বাড়াচ্ছেন তারা সরকারের ছায়ায় বসবাস করেন যে, তাদের গলা টিপে ধরা সম্ভব হচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও দাম কমে না, অস্বাভাবিক ব্যাপার! এত শক্তি, এত সাহস, এটা কীভাবে সম্ভব! এই জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করছে কয়েক বছর ধরে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্ম দেশের অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে গেছে। তারা ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে না। অপরাজনীতির কারণে তারা বিশ্বাস হারাচ্ছে। এই প্রজন্ম দেশ ছাড়তে চাচ্ছে। কিন্তু তারা দেশ ছাড়বে কেন? এই প্রজন্ম দেশ ছাড়লে মেধাবী হারাব আমরা।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আপনি দক্ষ নাবিকের মতো রাজনীতির জাহাজটা পরিচালনা করেছেন। এখন এই জাহাজটা মাঝ দরিয়ায়। দুর্নীতি সিন্ডিকেটের কারণে এ জাহাজকে ডুবতে দেওয়া যেতে পারে না। আপনি কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবেন না? আমি মনে করি, পারতেই হবে আপনাকে।
তিনি আরও বলেন, অসৎ ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবীদদের ত্রিমুখী সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করে দেশকে অস্থীতিশীল করে রেখেছে। এই তিন মাথার দানব বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে অক্টোপাসের মতো আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে। আমার প্রস্তাব, যদি বাজার স্থীতিশীল করতে চান, দেশকে স্থিতিশীল করতে চান; তাহলে তিন মাথার দানবকে ধরে মাথাগুলো থেঁতলে দিন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী মহানগর সভাপতি শরিফুল ইসলাম সুজন, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরীর। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাসদের সহ-সভাপতি অ্যাড.মজিবুল হক বকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ সিদ্দিকী শিবলী।
সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় যুবজোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাসদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, রাজশাহী জেলা জাসদের সভাপতি প্রদীপ মৃধা, মহানগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির বাবু,যুবজোটের কার্যকরী সভাপতি আমিনুল আজিম বনি প্রমুখ।
ডিপি/