সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
‘এই পোলার আয় দিয়াই আমরা চলতাম। পোলাডায় আমারে থুইয়া আগেই চইল্যা গেল। অ্যাহন আমার কী হইবে’- এ কথাগুলো বলে আহাজারি করছিলেন গাজী মো. জুয়েল রানা’র মা ফাতেমা বেগম।
জুয়েল রানা ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগার পর নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। সে ওই ভবনটির সাত তলায় অবস্থিত ‘এমবাসিয়া’ নামে একটি রেস্তোরায় বাবুর্চির (সেফ) কাজ করতেন। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, চার-পাঁচ বছর ধরে তিনি ওই রেস্তোরায় কাজ করেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে জুয়েলের বাড়ি। তার বাবার নাম মো. ইসমাইল গাজী। স্ত্রী রেবেকা সুলতানা এবং মেয়ে তাসমিম (৮), ছেলে তাইফুরকে (৩) নিয়ে ছিল তার সংসার। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকার বেইলি রোডের কাছাকাছি একটি এলাকায় বসবাস করতেন।
বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর জানালা ভেঙে নামতে গিয়ে গাজী মো. জুয়েল রানা মৃত্যুবরণ করেন। একই রেস্তোরাতে তার আপন ভাগিনা রাকিব আকনও কাজ করতো। মুঠোফোনে রাকিব আকন জানায়, বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর তারা তিনজন ছয়তলায় নেমে একটি জানালা ভেঙে বাহিরে নামার চেষ্টা করেন। প্রথমে রাকিব এবং পরে রেস্তোরার আরেক কর্মচারি ডিসের তার বেয়ে নিচে নামেন। তাঁর মামা জুয়েল রানা জানালা দিয়ে বের হয়ে একটি এসির ওপর বসেন। এ সময় এসিসহ ভেঙে সে নিচে পড়ে যায়। ভবনটির জানালার কয়েকটি কার্নিশের সাথে তার মামার শরীর আঘাত লেগে লেগে নিচে পড়ে। এতে মাথা ফেটে যায় এবং মেরুদন্ড ভেঙে কয়েক টুকরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই জুয়েল রানার মৃত্যু হয়।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, এক মাস আগে জুয়েলের ছোট বোন হাফিজার বিয়ে হয়েছে। জুয়েল ছুটি না পাওয়ায় বোনের বিয়েতে বাড়িতে আসতে পারেনি। রোজার আগে তার বাড়ি আসার কথা ছিল। এ সময় ছোট বোনকে তুলে দেয়ারও কথা ছিল।
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম মধুখালী এলাকার ইউপি সদস্য মো. কাওসার গাজী বলেন, বাবা দিনমজুর। মানুষের বাড়ি-ঘরে কাজ করতেন। মূলত জুয়েলের আয় দিয়েই পরিবারটি চলতো। কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকে কাঁতর হয়ে গেছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরাও খোঁজ-খবর নিয়েছি। শুনেছি পরিবারটি অতি দরিদ্র। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।
এফএইচ