সম্পাদক: আরিফ হাসান
দেশ টেলিভিশন লিমিটেড, কর্ণফুলী মিডিয়া পয়েন্ট, ৪২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭, বাংলাদেশ।
টেলিফোন: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৫৮, ৮৩৩২৯২২ ফ্যাক্স: +৮৮ (০২) ৮৩৩২৯৮১ মেইল: [email protected]
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ভুট্টার ‘ফিউজারিয়াম স্টক’ রোগ দেখা দিয়েছে। জেলার অধিকাংশ ভুট্টা খেতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চারটি উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে ব্লক সুপারভাইজাররা মাঠে যেয়ে কৃষকদেরকে এ রোগ সম্পর্কে অবহিত করছেন। মাঠে মাঠে ব্লকের কৃষি অফিসাররা প্রথম থেকেই এ রোগের প্রতিকার, করণীয় শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ফিউজারিয়াম স্টক মূলত সাংঘাতিক, ধ্বংসাত্মক একটি রোগ। এ রোগের সংক্রমণের ফলে, ফলনে ১০০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এটি মূলত মাটি, বীজ ও বায়ুবাহিত রোগের পোষক দেহের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। সম্প্রতিকালে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের এই রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ রোগের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে চাষিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে গত বছর থেকে অবহিত করা হচ্ছে। এ রোগ সম্পর্কে দামুহুড়দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ভুট্টা গাছের ফিউজজিরিয়াম স্টক রোগ ২০২০ সাল থেকে আমাদের বাংলাদেশে এই রোগ দেখা দেয়। চুয়াডাঙ্গাতেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দুই বছর থেকে আমরা চাষিদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্নভাবে অবহিত করেছি।
ইতোমধ্যে, মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যারা নিয়মের বাইরে ভুট্টা চাষ করেছে তাদের এই সমস্যা হয়েছে।
রোগের লক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষি সম্প্রসারণের উদ্ভিদ সংরক্ষণের অতিরিক্ত উপ পরিচালক কায়ছার ইকবাল বলেন, ফিউজিরিয়াম স্টক রট হলো ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের লক্ষণ আক্রান্ত গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। গাছ শুকিয়ে ধূসর বর্ণ ধারণ করে। অপরিপক্ক অবস্থায় গাছ মারা যায়। শিকড় গোড়া এবং নিচের গোড়াগুলো পচে যায়। কাণ্ড বিভক্ত করলে ভেতরে বিবর্ণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের কাণ্ডে চাপ দিলে নরম বোধ হয়। আক্রান্ত গাছের মোচাগুলো হেলে পড়ে এবং দানা অপুষ্ট থাকে।
এ রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে, শোধনকৃত বীজ ব্যবহার করতে হবে। গাছের উপযুক্ত ঘনত্ব বজায় রাখতে হবে। নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম সারের সহনীয় মাত্রা রাখতে হবে। অম্ল মাটিতে ফসল লাগানোর এক সপ্তাহ আগে অনুমোদিত মাত্রায় ডলোচুন ব্যবহার করতে হবে। লাগানোর দেড় মাস পর থেকে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। একই জমিতে বারবার ভুট্টার আবাদ থেকে বিরত থাকতে হবে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামে ভুট্টা চাষি ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় ফসলের পরিপক্ষ না আসার আগেই ‘ফিউজিরিয়াম স্টক’ রোগ দেখা দিয়েছে। এই বছরে যে ফলন আশা করেছিলাম তা হবে না। আমার মনে হচ্ছে ভুট্টা চাষে খরচই উঠবে না। একই গ্রামের ভুট্টা চাষি আবুজেল মল্লিক, সাদ আলী,আবু হেলালসহ অনেকের জমিতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও এ রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষে কৃষি বিভাগের গত বছরের যা লক্ষ্যমাত্রার তা এ বছরেও অর্জিত করা সম্ভব হয়েছে।
গত বছরের ন্যায় এবারও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪টি উপজেলায় চলতি বছর ৪৯ হজার ৪শ ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ। একইসঙ্গে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করছে কৃষি বিভাগ ।
গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ১৮০ হেক্টর আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৪ হজার ৫০০ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ১৪০ হেক্টর।
জেবি